ঢাকা, ১অগ্রহায়ণ (১৬ নভেম্বর): ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় নায়ক শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন ওরফে সালমান শাহ–এর মৃত্যু আজো রহস্যে ঘেরা। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর তাঁর অস্বাভাবিক মৃত্যু দেশজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছিল। প্রথমে অপমৃত্যুর মামলা হলেও সালমানের পরিবার শুরু থেকেই এটিকে হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করে আসছে। দুই দশকের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো পরিষ্কার হয়নি এটি হত্যা, নাকি আত্মহত্যা। এ সময়ের মধ্যে রেজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদ নামে এক তরুণ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে বলেন—তিনি ডনের নেতৃত্বে সালমানকে হত্যা করেছেন। সেই জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করে সালমানের মা ১১ জনকে আসামি করে নালিশি মামলা করেন। অভিযুক্তদের তালিকায় ছিলেন সালমানের স্ত্রী সামিরা হক, শাশুড়ি লতিফা হক লুসি, ধনাঢ্য ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই, রেজভী আহমেদ, খল অভিনেতা ডনসহ আরও কয়েকজন।
জবানবন্দিতে ফরহাদ উল্লেখ করেন, ওই রাতে ডনের নেতৃত্বে যখন তারা সালমানের বাসায় যান, তখন নিচতলার দরজা খুলে দিয়েছিলেন রাবেয়া সুলতানা রুবি। একই সময় আজিজ মোহাম্মদ ভাইও সেখানে উপস্থিত ছিলেন এবং হত্যাকারীদের সঙ্গে যুক্ত হন। রুবি সালমানের বাসার সামনেই মে ফেয়ার নামে একটি বিউটি পারলার চালাতেন ও তাঁর স্বামী ছিলেন চীনা নাগরিক।
২০১৭ সালে ইউটিউবে প্রকাশিত এক ভিডিওতে রুবি প্রকাশ্যে দাবি করেন—সালমান শাহকে খুন করা হয়েছে এবং তিনি পুরো সত্য জানেন। সেখানে সালমানের মা নিলুফার চৌধুরীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন—‘ইমন আত্মহত্যা করে নাই, তাকে খুন করা হইছে… আমার হাজবেন্ড এইটা করাইছে আমার ভাইরে দিয়ে… সামিরার ফ্যামিলি করাইছে… আমার ছোট ভাই রুমিরে দিয়া খুন করানো হইছে… রুমিরেও খুন করা হইছে…।’
ভিডিওতে তিনি আরও দাবি করেন, রুমির লাশ কবর থেকে তুললে দেখা যাবে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছিল। একই সঙ্গে তিনি বলেন, তাঁকেও খুনের চেষ্টা করা হয়েছিল এবং মামলাটি যেন বন্ধ না হয়।
তদন্ত সংস্থা পিবিআই এ বিষয়ে জানায়, রুবি ঘটনার আগে-পরে সালমানের বাসায় ছিলেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান, পরে ইউটিউবে তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়। তবে এসব দাবি কতটা সত্য, কতটা মিথ্যা—তা তদন্তের বিষয়।
অন্যদিকে লন্ডনে অবস্থানরত সালমান শাহের মা নিলুফার চৌধুরী বলেন—‘রুবির এ বক্তব্যের পর আর কিছু বলার অপেক্ষা থাকে না, আমার ছেলেকে খুন করা হয়েছিল। রুবিকে নিরাপত্তা দিয়ে দেশে এনে আদালতে সাক্ষ্য দিতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এত বছর ধরে আমি হতাশায় আছি। আমার নিজেরও দেশে নিরাপত্তা নেই, তাই লন্ডনে থাকতে হচ্ছে।’
দীর্ঘ ২১ বছর পরও সালমান শাহকে ঘিরে প্রশ্ন রয়ে গেছে—নায়ক কি নিজেই জীবন শেষ করেছেন, নাকি রূপালি পর্দার আইকনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল? তদন্তের নতুন দিক কি সামনে আসবে, সেটিই এখন দেখার বিষয়।